করোনাকালের দু’বছর পর উৎসবমুখর পরিবেশে যথাযথ ভাবগাম্ভির্যের মধ্য দিয়ে পবিত্র মাহে রমজান পালন করছে টাঙ্গাইলের ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা।
বিগত খ্রিষ্টীয় ২০২০ সনের মার্চ মাসে দেশে প্রথম করোনা রোগী সনাক্তের পর সংক্রমণ বাড়তেই থাকে। এরপর সরকার করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে নানা পদক্ষেপের অংশ হিসেবে স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালত বন্ধ ঘোষণা করেন। স্বাস্থ্য বিধি মেনে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দোকান, বাজার করতে নির্দিষ্ট সময় দেয়া হয়। গণপরিবহনও বন্ধ ঘোষণা করা হয়। করোনা সংক্রমণের একপর্যায়ে ধর্ম মন্ত্রণালয় ২০২০ সালের ৬ এপ্রিল এক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে মসজিদে জামাতে নামাজ আদায় করতে শুধুমাত্র খতিব, ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদেমের অংশগ্রহন করতে নির্দেশনা দেয়া হয়। এরপর ২০২১সালের পবিত্র রমজান মাসেও করোনা সংক্রমণ না কমায় বিধি-নিষেধ চলমান থাকে। এতে করে দুটি বছর ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজসহ রমজান মাসের খতমে তারাবিহ নামাজ হতে বিরত ছিলেন। করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আরোপিত বিধি-নিষেধ গত বছরের ৫ আগস্টের পর আর বর্ধিত করেনি সরকার।
বিধি-নিষেধ শিথিলের পর গত ২ এপ্রিল শনিবার সন্ধ্যায় সরকারের ধর্ম মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ১৪৪৩ হিজরির পবিত্র রমজান মাসের চাঁদ দেখা যাবার আনুষ্ঠানিক ঘোষণার পরপরই ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মধ্যে দু’বছর পর উৎসব ও তারাবিহ নামাজের প্রস্তুতি নিতে দেখা গেছে। এ বছর রমজানে উপজেলার সাতশত সাতাত্তরটি মসজিদের মধ্যে অন্তত তিনশত নব্বইটি মসজিদে এবার খতমে তারাবি নামাজ অনুষ্ঠিত হচ্ছে বলে জানা গেছে।
আজ সোমবার বিকালে টাঙ্গাইলে কালিহাতী উপজেলা সদরের দক্ষিণ বেতডোবা বায়তুল ফালাহ জামে মসজিদের মুসুল্লি রিক্সা চালক মো. ওমর বলেন করোনার কারণে সরকারের নিষেধের কারণে গেলো দুই বছর আমরা নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্তসহ রমজানের তারাবিহ নামাজ পড়তে পারিনি। এবার দুবছর পর খতমে তারাবিহ পড়ছি, খুব আনন্দ লাগছে।
হযরত ফাতেমা (রা.) মহিলা মাদরাসার মুহাদ্দিস মুফতি মিজানুর রহমান বায়েজিদ বলেন, করোনা সংক্রমণ কমে যাবার পর সরকার নতুন করে বিধি-নিষেধ না দেওয়ায় নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্তসহ তারাবিহ নামাজে সকল বয়সি মুসু্ল্লিদের উপস্থিতিতে কানায় কানায় পূর্ণ হচ্ছে মসজিদগুলো। উপজেলা ইমাম মুয়াজ্জিন পরিষদের সভাপতি মাওলানা মো. আবু হানিফ বলেন, করোনা সংক্রমণের শঙ্কা কমে যাওয়ায় এবার উপজেলার মোট মসজিদের প্রায় অর্ধেকের বেশি মসজিদে খতমে তারাবিহ অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. সহিদুর রহমান বলেন, সকলের সার্বিক সহযোগিতায় সরকারের টিকা দান কর্মসূচি সফল হওয়ায় সংক্রমণ ও মৃত্যু নিয়ন্ত্রণে এসেছে। সরকার তাই বিধি-নিষেধও আর প্রলম্বিত করেনি। জামাতে নামাজ পরতে কোনও বাধা না থাকলেও তারপরও আমাদের সকলকে সচেতন থাকতে হবে। উল্লেখ্য, গত ২ এপ্রিল শনিবার সন্ধ্যায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খানের সভাপতিত্বে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির বৈঠক শেষে ও এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয় ১৪৪৩ হিজরির পবিত্র রমজান মাসের চাঁদ দেখা গেছে। রোববার থেকে দেশের মুসলমানরা প্রথম রমজান পালন করবে। গত শনিবার রাত থেকে তারাবির নামাজ আদায় করছে মুসল্লিরা।