গ্রেপ্তারকৃত টাঙ্গাইল পৌরসভার ১৭ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও জেলা যুবলীগের সাবেক সহসভাপতি আতিকুর রহমান মোর্শেদের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় স্ত্রী সৈয়দা আমেনা পিংকিকে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মোর্শেদের দ্বিতীয় স্ত্রী’র বাবা সৈয়দ শরিফ উদ্দিন (৫৬) বাদি হয়ে ৯ জনের নাম উল্লেখ ও আর অজ্ঞাত ৩/৪ জনকে আসামী করে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
অপরদিকে সোমবার বিকেলে তিন দিনের রিমান্ড শেষে মোর্শেদকে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। টাঙ্গাইলের আদালত পরিদর্শক তানভীর আহমেদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলার আসামীরা হলো- টাঙ্গাইল শহরের বিশ্বাস বেতকা এলাকার মৃত আব্দুর রহিমের ছেলে আতিকুর রহমান মোর্শেদ (৫২), মৃত আব্দুল মোমেনের ছেলে মুন্সী তারেক পটন (৪৯), মৃত লুৎফর রহমানের ছেলে পারভেজ খান রনি (৩৬), সোহেল ওরফে বাবু (২৭), দুলাল সূত্রধরের ছেলে অন্তর সূত্রধর (২৭), আতিকুর রহমান মোর্শেদের প্রথম স্ত্রী সুমা (৪৫), মুন্সী তারেক পটনের স্ত্রী লিনা (৪০), শামীম আল মামুনের ছেলে রাফসান (২৮), মৃত আজিজ মিয়ার ছেলে আয়নাল মিয়া (৪৫)।
এদিকে মামলা সূত্রে জানা যায়, কাউন্সিলর মোর্শেদের বাসার সামনে সৈয়দ শরিফ উদ্দিন পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বাসা ভাড়া থাকতেন। সেখান থেকে বিগত ২০১২ সালের জুন মাসে তার মেয়ে সৈয়দা আমেনা পিংকিকে মোর্শেদের লোকজন অপহরণ করে। পরে ১৭ নং ওয়ার্ডের কাজী মোস্তফার মাধ্যমে আতিকুর রহমান মোর্শেদের সাথে সৈয়দ আমেনা পিংকির বিয়ে হয়। বিয়ের কিছুদিন পর জোর করে বিয়ের কাজী মোস্তফার বালাম বই থেকে মোর্শেদ তাদের কাবিন নামা ছিড়ে ফেলে দেয়। তাদের সংসারে ছয় বছরের এক মেয়ে সন্তান রয়েছে। দুই স্ত্রী থাকায় মোর্শেদের পরিবারে মাঝে মাঝে ঝগড়ার সৃষ্টি হয়। বিগত ২০১৭ সালের ২৬ জানুয়ারি রাতে মুন্সী তারেক পটনের বাসায় দাওয়াতের কথা বলে পিংকিকে নিয়ে যায় মোর্শেদ। সেখানে নিয়েই অভিযুক্ত আসামীরা পিংকিকে হত্যা করে লাশ গুম করে।
নিহত পিংকির বাবা ও মামলার বাদি সৈয়দ শরিফ উদ্দিন বলেন, আমার মেয়ে পিংকিকে মোর্শেদ জোড় করে অপরহরণ করে বিয়ে করে। এরপর মোর্শেদসহ তার বাহিনীর লোকজন আমার মেয়েকে হত্যা করে। মোর্শেদসহ তার ক্যাডার বাহিনীর ফাঁসি দাবি করছি।
টাঙ্গাইল আদালত পরিদর্শক তানভীর আহমেদ জানান, আদালতের বিচারক শামসুল আলম টাঙ্গাইল সদর থানার ওসিকে তদন্ত শেষে প্রতিবেদন জমা দিতে বলেছেন।
জানা যায়, টাঙ্গাইল পৌরসভার ১৭ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আতিকুর রহমান মোর্শেদকে গত বৃহস্পতিবার গোয়েন্দা পুলিশ ও সদর থানা পুলিশ যৌথ অভিযান চালিয়ে পৌরসভার সামনে থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে। পরে তার বিশ্বাস বেতকা এলাকার বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে দুইটি বিদেশি পিস্তল, ছয় রাউন্ড গুলি ও দুটি ম্যাগজিন উদ্ধার করে পুলিশ। গত শুক্রবার জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মোর্শেদকে তিন দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। সোমবার তিন দিনের রিমান্ড শেষে মোর্শেদকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়।
টাঙ্গাইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর মোশারফ হোসেন জানান, রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে মোর্শেদ তার ওই অস্ত্র এবং সন্ত্রাসী কর্মকান্ড সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য দিয়েছে। তার দেয়া তথ্য যাচাই করা হচ্ছে।
টাঙ্গাইল সদর থানা সূত্র জানায়, বিভিন্ন সময়ে দায়ের করা আতিকুর রহমান মোর্শেদের বিরুদ্ধে দুই যুবলীগ নেতা হত্যা, ছাত্রদল নেতা রেজা হত্যা, ব্যবসায়ী তুহিন হত্যা মামলাসহ চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের এক ডজন মামলা হয়েছে সদর থানায়।
স্থানীয় সূত্র জানায়, মোর্শেদ টাঙ্গাইল শহর ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন। পরে জেলা যুবলীগের সহ সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে দলীয় পদ না থাকলেও শহর আওয়ামী লীগের দলীয় বিভিন্ন কর্মকান্ডে অংশ নিতেন। এছাড়া তার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত ছাত্রদল নেতা রেজা হত্যা মামলাটি রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে।