আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে একই সময়ে ভিন্ন জায়গায় বড় সমাবেশের মধ্যদিয়ে শোডাউন করেছেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী হাছান ইমাম খান সোহেল হাজারী ও আবু নাসের।
মঙ্গলবার ১৪ নভেম্বর বিকালে উপজেলার কালিহাতী আর.এস সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে কালিহাতী পৌর আওয়ামী লীগের ব্যানারে শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশে করেন বর্তমান সংসদ সদস্য হাছান ইমাম খান সোহেল হাজারী। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন তিনি। অপরদিকে একই সময়ে এলেঙ্গা বাসস্ট্যান্ডের পুরাতন ভূঞাপুর সড়কে শান্তি সমাবেশ করেন জেলা আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ও এফবিসিসিআইয়ের সাবেক পরিচালক আবু নাসের। এর আগে এলেঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ থেকে শান্তি শোভাযাত্রা করে সমাবেশ স্থলে সমবেত হন উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে আগত আবু নাসেরের কর্মী-সমর্থকেরা। সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন আবু নাসের। দুটি সমাবেশেই হাজার হাজার জনতার উপস্থিতি ছিল উপচে পড়া। হাছান ইমাম খান ও আবু নাসের উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রতিদিন উঠান বৈঠক ও সমাবেশসহ নানাভাবে গণসংযোগ করছেন।
এ আসনে কে পাবেন মনোনয়ন, তা নিয়ে নানা আলোচনা ও গুঞ্জনের মধ্যে দুজনেই বড় সমাবেশ ও শোভাযাত্রার মাধ্যদিয়ে মনোনয়ন দৌড়ে নিজেদের শক্তির প্রদর্শন করলেন বলে মনে করছেন স্থানীয় রাজনীতিকেরা। অবশ্য এ দুই মনোনয়ন প্রত্যাশীর কারো সঙ্গেই দেখা যায়নি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে।
প্রসঙ্গত, আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সাবেক সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী ২০১৪ সালে নিউইয়র্কে হজ, তাবলিগ ও প্রধানমন্ত্রীপুত্র জয় সম্পর্কে বিতর্কিত মন্তব্যের প্রেক্ষিতে দল ও মন্ত্রিসভা থেকে বহিষ্কৃত হন। পরে লতিফ সিদ্দিকী সংসদ থেকে পদত্যাগের কারণে উপনির্বাচনে হাছান ইমাম খান দলীয় মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ২০১৮ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচনে হাছান ইমাম আবারও দলীয় মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচিত হন।
সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পরপরই হাছান ইমামের সঙ্গে উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের দূরত্ব তৈরী হয়, যা এখনও প্রকট। এমন পরিস্থিতিতে আগামী নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নের জন্য মাঠে নামেন জেলা আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ও এফবিসিসিআইয়ের সাবেক পরিচালক আবু নাসের। এছাড়াও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোজহারুল ইসলাম তালুকদারও মনোনয়ন প্রত্যাশী বলে জানা গেছে।
কালিহাতীর সমাবেশের বক্তব্যে হাছান ইমাম খান কালিহাতীতে তাঁর সময়ের বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ তুলে ধরে বলেন, বিগত ৩০-৩৫ বছরে কালিহাতীতে এতো উন্নয়ন কাজ হয়নি। তাই উন্নয়নের জন্য শেখ হাসিনার সরকারকে আবারও ক্ষমতায় আনতে হবে। তিনি এবারও এ আসনে দলীয় মনোনয়ন পাবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মালেক তালুকদারের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আনছার আলী, ভাইস চেয়ারম্যান মো. আখতারুজ্জামান, জেলা আওয়ামী লীগের শ্রমবিষয়ক সম্পাদক শরীফ হাজারী, উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি আবদুল মালেক ভূঁইয়া প্রমুখ। সমাবেশে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ও দুটি পৌরসভা থেকে নেতা-কর্মীরা যোগ দেন।
এলেঙ্গার সমাবেশে আবু নাসের তাঁর বক্তব্যে বলেন, কালিহাতীতে শান্তি নাই, মুক্তিযোদ্ধা রক্তাক্ত হয়, প্রধান শিক্ষক রক্তাক্ত হয়। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা মিথ্যা মামলায় জর্জরিত হয়, নিয়োগ বাণিজ্য হয়। কালিহাতী মাদকের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। হিন্দু-মুসলিম, জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে শান্তি. সম্মান, সম্প্রীতির একটি সমাজ গড়তে চাই। মায়েদের ও মেয়েদের চলাফেরায় কোনও প্রকার সম্মানহানি না হয় সেরকম কালিহাতী গড়তে চাই। দক্ষ মানবসম্পদ সৃষ্টির শিক্ষাব্যবস্থা চালু করতে চাই। শিক্ষাশেষে চাকরি ও কর্মসংস্থানের দায়িত্ব গ্রহণ করতে চাই। তিনি বলেন, মনোনয়ন পেলে দলীয় নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষদের সঙ্গে নিয়ে মাদক-সন্ত্রাসমুক্ত শান্তি ও সম্প্রীতির স্মার্ট কালিহাতী গড়ে তুলবেন।