টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল উপজেলাধীন ধলাপাড়া ইউনিয়নের একটি ঐতিহাসিক গ্রাম গুপ্তবৃন্দাবন। গ্রামটি ঘাটাইল উপজেলা সদর হতে ২৮ কিলোমিটার পূর্বদিকে ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় অবস্থিত। গুপ্তবৃন্দাবন প্রতিষ্ঠা নিয়ে রয়েছে নানা কাহিনী। কিংবদন্তি। এখানে রয়েছে প্রায় ৭০০ বছরের পুরনো একটি তমাল গাছ। এই গাছকে ঘিরে রয়েছে নানান কল্পকথা। স্থানীয় হিন্দু আদিবাসী ও বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের লোকদের বিশ্বাস মথুরায় শ্রীকৃষ্ণের উপর কংশ রাজার অত্যাচারের কারণে রাঁধা এবং ১৫০০ গোপিনীকে নিয়ে শ্রীকৃষ্ণ এখানে পালিয়ে আসেন। এই তমাল গাছে বসেই দোল খেতেন রাঁধা- কৃষ্ণ। সেই থেকেই এই এলাকার নাম গুপ্ত বৃন্দাবন।
ইতিহাসে পাওয়া যায় ভিন্ন তথ্য। ধারণা করা হয় ষোড়শ শতকের মাঝামাঝি সময়ে শ্রীকৃষ্ণের ভক্ত বৈষ্ণব ধর্ম প্রচারক শ্রী চৈতন্যদেব এর অন্যতম ভাবশিষ্য মাধবাচার্য কতৃক গুপ্ত বৃন্দাবনে প্রতিষ্ঠা করা হয় ” আখরা”।
যা পরবর্তীতে বৈষ্ণব তীর্থকেন্দ্রে পরিণত হয়। এলাকাটির নাম পূর্ব হতেই বৃন্দাবন ছিল। তাই গুপ্ত বৃন্দাবন নামের বিষয়ে অনেকের মতে গুপ্ত বংশীয় রাজা বৈণ্যাগুপ্তের নামের শেষাংশ বৃন্দাবনের সাথে যুক্ত করে নামকরণ করা হয় গুপ্ত বৃন্দাবন। উপরন্তু এ ধারণাও করা হয় ভারতের মথুরার বৃন্দাবনের অপর নাম ” ব্রজধাম “, ব্রজ শব্দের অর্থ জবর বা প্রকাশহীন অর্থাৎ গুপ্ত। ব্রজধাম মূলত মাধুর্যধাম। সেই বৃন্দাবনের অনুরূপ ধাম প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে মাধবাচার্য কতৃক বৈণ্যাগুপ্তের স্মৃতি বিজড়িত বৃন্দাবনের আগে গুপ্ত যোগ করে নামকরণ করা হয় গুপ্ত বৃন্দাবন।
আরও জনশ্রুতি আছে এ অঞ্চল হতে গুপ্ত বংশীয় নিদর্শন উদ্ধারের কারণে এবং গুপ্ত শাসনামলের বিভিন্ন স্মৃতি চিহ্নের কারণে বৈষ্ণব ধর্মের অন্যতম প্রচারক মাধবাচার্য কতৃক ১৫৭৭ সালে এলাকাটি গুপ্ত বৃন্দাবন নামে পরিচিতি লাভ করে।
এখানে প্রতি বছর চৈত্র মাসের ১২ তারিখে আয়োজন করা হয় ” বারুনি” মেলার। এখনো এখানে রয়েছে প্রাচীন মন্দির। মন্দিরে রাঁধা- কৃষ্ণের যুগল মূর্তি। মন্দিরের সামনেই কিংবদন্তির তমাল বৃক্ষ। প্রতি বছর আয়োজিত বারুনি মেলায় স্থানীয় হিন্দু, বৈষ্ণব, আদিবাসী গোষ্ঠী ছাড়াও বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসে দর্শনার্থী। ভারত এবং নেপাল থেকেও আসে
রাঁধা – কৃষ্ণ ভক্তবৃন্দ। এর কাহিনী যতটাই কল্পকাহিনী বা কিংবদন্তি হোক একথা নিশ্চিতভাবেই বলা যায় গুপ্ত বৃন্দাবন একটি ঐতিহাসিক স্থান।
লেখকঃ ইসমাইল হোসেন সেলিম