টাঙ্গাইলের কিশোরী স্কুল ছাত্রী সুমাইয়া হত্যা রহস্য ১০ ঘন্টার মধ্যে উন্মোচন করে প্রধান সন্দেহভাজন আসামি মনির (১৭)কে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে আটক করেছে র্যাব-১২।
বুধবার(২৭ অক্টোবর) সকাল ৯টার সময় টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গায় সুমাইয়া আক্তার(১৫) নামে এক স্কুল ছাত্রীর রক্তাক্ত লাশ পাওয়া গেছে।
ভিকটিমের মায়ের সাথে কথা বলে জানা যায়, সকাল ৭ টার দিকে ভিকটিম প্রাইভেট পড়ার উদ্দেশ্যে বাড়ী থেকে বের হয়। এঘটনা টাঙ্গাইলসহ সারাদেশে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। ভিকটিম কোন মোবাইল ব্যবহার করত না, ঘটনাস্থলে র্যাব-১২, সিপিসি-৩, টাঙ্গাইলের কোম্পানি কমান্ডার লেঃ কমান্ডার আব্দুল্লাহ আল মামুন সহ গোয়েন্দা টীম উপস্থিত হয়ে হত্যার প্রকৃত কারন খুজে বের করার চেষ্টা করে। পরবর্তীতে ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট সকল বিষয়ে বিশ্লেষণ করে তদন্ত এগিয়ে যায়। ভিকটিমের পরিবার, বন্ধুবান্ধব, প্রতিবেশী ও ঘটনাস্থলে উপস্থিত লোকজনের সাথে কথা বলে প্রথমে কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। র্যাবের গোয়েন্দা টীম দীর্ঘসময় তদন্ত করে জানতে পারে মনির নামে এক বখাটে ছেলের সাথে ভিকটিমের প্রেমের সম্পর্ক ছিল, এই তথ্যের সূত্র ধরে র্যাবের তদন্ত টীম ছেলেটির পরিচয় বের করে এবং ভিকটিমের হত্যার সাথে কোন সংশ্লিষ্টতা আছে কি না অনুসন্ধান করতে থাকে। মনিরের ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের জিজ্ঞাসা বাদে ধীরে ধীরে উন্মোচিত হতে থাকে হত্যাকান্ডের রহস্য। মনিরের বন্ধুর মোবাইলের ছবি ও ভিডিও এর সূত্রধরে বিভিন্ন বিষয়ের তথ্যের সন্নিবেশ ঘটিয়ে হত্যা রহস্য উদঘাটন করা হয়। জানা যায়, ভিকটিম সুমাইয়ার সাথে ট্রাকের হেলপার মনিরের দীর্ঘ ২ বছর যাবত প্রেমের সম্পর্ক ছিল। মনির অত্যন্ত বদমেজাজি এবং নেশাগ্রস্ত। সে ভিকটিমের সাথে শারীরিক সম্পর্ক করার জন্য বিভিন্ন সময় চাপ দিত এবং শারীরিক নির্যাতন করত, ধীরে ধীরে ভিকটিম সুমাইয়া তার সাথে সম্পর্ক ছেদ করে অন্য একটা ছেলের সাথে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে যায় ২ মাস পূর্বে। ইহাতে মনির অত্যন্ত রাগান্বিত হয়। গত ৫/৭ দিন পূর্বে ভিকটিম সুমাইয়াকে মনির রাস্তায় একা পেয়ে মারপিট করে এতে ভিকটিমের কান দিয়ে রক্ত চলে আসে এবং চিকিৎসা করাতে হয়। এই চড় থাপ্পড় মারার দৃশ্য মনির ভিডিও করে রেখে বন্ধুদের দেখায়।
মঙ্গলবার (২৬ অক্টোবর) রাত ১০ টায় মনির তার ঘনিষ্ঠ ৫/৬ জন বন্ধুদের নিয়ে এলেঙ্গা সামসুল হক কলেজে মিটিং করে এবং সুমাইয়া ও তার নতুন প্রেমিকের উপর প্রচন্ড ক্ষোভ প্রকাশ করে। মনির পাগলের মত আচরণ করতে থাকে এবং ২০/৩০ মিনিট পর সবাই যার যার বাড়ী চলে যায়। ভিডিও বিশ্লেষন করে দেখা যায়, ট্রাক হেলপার মনির একটি সুইচ গিয়ার সংগ্রহ করে এবং লাইকির জন্য ভিডিও তৈরি করে। বিভিন্ন স্টাইলে মনির ঐ সুইচ গিয়ার চাকুর ব্যবহার করার ভিডিও করে, যা র্যাব-১২ টাঙ্গাইলের গোয়েন্দা টীম উদ্ধার করে।
এই সুইচ গিয়ারের সূত্র ধরে, ঘটনাস্থলে একই রক্তাক্ত সুইচ গিয়ার পড়ে ছিল, যা বর্তমানে পুলিশ জব্দ করেছে। এভাবে র্যাবের ছায়া তদন্তে স্কুল ছাত্রী সুমাইয়া(১৬) হত্যার প্রধান সন্দেহভাজন হিসেবে ট্রাক হেলপার মাদকাসক্ত মনিরকে সনাক্ত করে।
মনিরের বর্তমান অবস্থান খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আত্মহত্যা করার প্রচেষ্টার সময় এলেঙ্গা হতে গুরুতর আহতাবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মুমূর্ষু অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছে। র্যাবের গোয়েন্দা তৎপরতায়, প্রযুক্তির এবং র্যাবের ছায়া তদন্তে মাধ্যমে র্যাব-১২, সিপিসি-৩, টাঙ্গাইল এর কোম্পানী কমান্ডার লেঃ কমান্ডার আ্দুল্লাহ আল মামুন এর নেতৃত্বে একটি আভিযানিক দল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে প্রধান সন্দেহভাজন আসামি মনির (১৭)কে (২৭ অক্টোবর) রাত সাড়ে ৭ টার সময় আটক করে। টাঙ্গাইলের কোম্পানী কমান্ডার লেঃ কমান্ডার আব্দুল্লাহ আল মামুন রাত্রী ১১টায় প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন।