ঈদুল আজহার ছুটির দিন থেকেই টাঙ্গাইল-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে অসাধু মৌসুমী ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ন্য কিছুতেই কমছে না। অসহনীয় গরম ও তীব্র যানজটে আটকে পড়া যাত্রীদের কাছে একটি বোতলজাত আধা লিটার পানির দাম ১৫ টাকা থাকলেও তা বিক্রি করছেন ৪০-৫০ টাকায়। আবার প্লাস্টিকের প্যাকেটে একটি ডিম ও কয়েক মুঠো ভাত বিক্রি করছেন ৮০-১০০ টাকা।
প্রিয়জনদের সাথে ঈদের আনন্দ উপভোগ করে কর্মস্থলে যাওয়ার পথে মহাসড়কে যানজটের কবলে পড়ে দুর্ভোগ পৌঁহাতে হয় উত্তরবঙ্গ থেকে আসা ঢাকামুখী মানুষদের। আর অসাধু মৌসুমী ব্যবসায়ীরা যাত্রীদের অসহায়ত্বের সুযোগে কয়েকগুণ অতিরিক্ত দামে পণ্য বিক্রিতে মেতে উঠেছে।
শনিবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত মহাসড়কের বঙ্গবন্ধু রেলস্টেশন ও টোলপ্লাজা এলাকাজুড়ে ঘুরে দেখা যায়, স্থানীয় অসংখ্য মৌসুমী পানি ও খাবার ব্যবসায়ীরা যানজটে আটকে থাকা যাত্রীদের কাছে অতিরিক্ত দামে পানি বিক্রি করছে, আবার খাবারেও অতিরিক্ত দাম নিচ্ছেন।
এদিকে, কিছু অসাধু ব্যক্তিরা টিউবওয়েলের পানি বোতলজাত করে ফ্রিজে রেখে পানি ঠান্ডা করে অবাধে বিক্রি করছে এমন চিত্রও লক্ষ্য করা যায়। এসব ব্যক্তিরা গণমাধ্যমকর্মীদের উপস্থিতি দেখলে পালিয়ে যায়। পরে আবার তারা পুনরায় সেই টিউবওয়েলের পানি বিক্রি শুরু করেন।
যানজটে আটকে থাকা পোশাককর্মী রোজিনা বেগমের সাথে কথা হলে তিনি জানান, সেতু পূর্ব টোলপ্লাজা পাড় হয়ে খোলা পিকআপে প্রায় ৩০ মিনিট আটকে ছিলাম। এ সময় তীব্র গরমে কোলের শিশুটি তৃষ্ণায় ছটফট করছিল। পরে স্থানীয় এক লোকের থেকে ১৫ টাকার পানি ৫০ টাকা কিনে নিয়েছি।
তার সাথে থাকা পোশাককর্মী রুবিয়া বেগম বলেন, ঈদে বাড়ির ফেরার পথেও অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। আর ঢাকা ফেরার পথেও একই অবস্থা। একদিকে, অতিরিক্ত গরমে অতিষ্ঠ জীবন আরেক দিকে যানজট। এরমধ্যে তীব্র তাপদাহে গলা শুকিয়ে কাঠ হচ্ছে। এখানে পানি বিক্রির নামে দিনে-দুপুরে ডাকাতি করছে আমাদের থেকে।
রিকশা চালক রহমান মিয়া বলেন, নাটোর থেকে কর্মস্থলে ঢাকা যাচ্ছিলাম। পথিমধ্যে আমাদের বাসটি সকালে বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব গোল চত্বর পৌঁছলে বিকল হয়ে যায়। বাসটি মেরামতের কাজ চলছে। সন্তানদের নিয়ে রেললাইনের পাশে বসে রয়েছি। এখানে এক ব্যবসায়ীর থেকে খাবার কিনতে গিয়ে পড়ি বিপাকে। ৩০ টাকার খাবার নিচ্ছে ১০০ টাকা।
স্থানীয় মৌসুমী ব্যবসায়ী শফিক ও কাদের বলেন, ঈদে মোকামে পানির সংকট। সেখান থেকে বেশি দামে পানি কিনে আনতে হয়েছে। তাই আমরা অতিরিক্ত দামে পানি বিক্রি করছি। সব জিনিষের দাম বেশি হওয়ায় খাবারের দাম বেশি নেয়া হচ্ছে। টিউবওয়েলের পানি বোতলজাত করে বিক্রির বিষয়টি স্বীকার করে তারা আরও বলেন, কিছু কিছু ব্যক্তিরা এমনটা করছে।
এসব মৌসুমী ব্যবসায়ীরা শুধু পানি ও খাবার বিক্রি করেই দিনে ৬-৮ হাজার টাকা আয় করছেন। মহাসড়কে পানি ও খাবারের পাশাপাশি আমরা, বাদাম, ঝাল চানাচুর, কলা, রুটি, সষা, পেঁয়ারাও বিক্রি করছে। এতে করে স্থানীয়রা লাভবান হচ্ছে অনেকটা। এসব পণ্য বিক্রিতে অংশ নিচ্ছে স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থীরাও।
অতিরিক্ত পণ্য বিক্রি ব্যাপারে মহাসড়কে দায়িত্বে থাকা বঙ্গবন্ধু সেতু সেতু পূর্ব থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) জিলকদ জানান, মহাসড়কে যানজট মুক্ত রাখতে আমরা পুলিশ সদস্যরা হিমশিম খাচ্ছি। পানি ও খাবারসহ নানা ধরণের খাদ্যসামগ্রী বিক্রির বিষয়ে তদারকি করার সুযোগ থাকে না।