আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লতিফ সিদ্দিকী নিজের বা স্ত্রী লায়লা সিদ্দিকীর প্রার্থীতার বিষয়ে স্পষ্ঠ না করলেও দিন দিন জনতার ঢল বাড়ছে লতিফ সিদ্দিকীর পথসভায়। এর প্রতিক্রিয়াও লক্ষ্য করা গেছে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী অন্যান্য প্রার্থীদের বক্তৃতায়ও। জাতীয় সংসদের ১৩৩ টাঙ্গাইল-৪ কালিহাতী আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া না পাওয়াকে ঘিরে জমে ওঠেছে কালিহাতীর রাজনীতি। পুরনো বিষয়ে আলেম সমাজকে ব্যবহার করার চেষ্টাও হালে পানি পায়নি বলে মনে করছেন স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। এসকল ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া, বক্তব্য-পাল্টা বক্তব্যের রেশ পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতেও। স্থানীয় সচেতন নাগরিকেরা একে-অপরের প্রতি অশ্রদ্ধাশীল বক্তব্য প্রদানকে উদ্বেগজনক মনে করছেন।
উপজেলা মানবাধিকার কমিশনের সাবেক সহসভাপতি ও স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষক শ.খ.ম রফিকুল ইসলাম সিদ্দিকী বলেন, রাজনৈতিক শিষ্ঠাচারের বাহিরে গিয়ে কালিহাতীর রাজনীতিতে অতীতে ব্যক্তিগতভাবে অসম্মানজনক বা শ্রদ্ধাহীন বক্তব্য দিতে দেখা যায়নি কাউকেই। সম্প্রতি এধরণের কিছু বক্তব্য ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ভালো আচরণের ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার অন্তরায়। এটি একটি সুস্থ সমাজের জন্য উদ্বেগজনক। ক্ষমা প্রার্থনার পরও অতীতের বিষয়টি নতুন করে সামনে আনার চেষ্টা রাজনৈতিক দূরদর্শিতার অভাব। ক্ষমা প্রার্থনার পর বিষয়টি সাধারণ মানুষেরাও ভুলে গেছে, সাধারণ ও সচেতন কোন মহলেই একটি পক্ষের চেষ্টা সাড়া ফেলতে পারেনি।
পাঁচ বছর আগে হামলার ঘটনার প্রেক্ষিতে প্রচারণা শেষ করা উপজেলার জোকারচর এলাকা থেকেই গত ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে গণসংযোগ শুরু করেন লতিফ সিদ্দিকী। এরপর ২৯ সেপ্টেম্বর রামপুর বাজারে, ৬ অক্টোবর কস্তুরীপাড়ায়, ১৩ অক্টোবর পটল বাজারে, পরদিন বাগুটিয়া বাজারে, ২০ অক্টোবর কোকডহড়া বাজারে, পরদিন জোয়াইর, আটাবাড়ি, পারখী ও বর্গা বাজারে গণসংযোগের পর গত রোববার এলেঙ্গায় পথসভা করেন। প্রত্যেকটি পথসভায় তিনি বলছেন, স্বাধীনতার পরাজিত বিএনপি-জামায়াত জোট ও আমেরিকা শেখ হাসিনার সরকারকে উৎখাত করতে দেশকে সংকটে ফেলার যে আন্দোলন করছে সে সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করার মধ্যদিয়ে দায়িত্ব পালন করছি। আমি নির্বাচনে প্রার্থী হতে আসিনি তবে শেখ হাসিনা চাইলে আমি নির্বাচন করবো। যদিও রামপুরের পথসভায় সাবেক সাংসদ স্ত্রী লায়লা সিদ্দিকী যে কোনও মার্কায় প্রার্থী হতে পারেন বলে জানান। রোববার এলেঙ্গায় তিনি বলেছেন যারা লুটেরা, ঘুষখোর, দুর্নীতি করে, বালুখেকো, নিয়োগ বাণিজ্য করে, জোরকরে জমি দখল করে তারা যেনো আপনাদের শান্তি নষ্ট করতে না পারে। এসকল কাজ করে তারা শেখ হাসিনার সম্মান কমাচ্ছে। যারা মানুষের ওপর অত্যাচার করে, নিয়োগ বাণিজ্য করে তাদেরকে বয়কট করুন। উন্নয়ন নষ্ট করতে আসা ইঁদুরদের যাঁতাকলে আটকিয়ে নদীতে ছেড়ে দিতে হবে। আপনারা ডাকলে আপনাদের দাবি থাকলে ১৮ সালের মতো ফিরে যাব না একাত্তরের মতো করে আপনাদের সাথে থাকবো। অপেক্ষা করুন ১৫ নভেম্বরের মধ্যে মেঘ কেটে যাবে। স্বাধীনতা বিরোধী শক্তিদের ও ঘুষখোরদের আস্ফালন বন্ধ হবে।
এসকল পথসভায় তাঁর সহধর্মিণী ও সাবেক সাংসদ লায়লা সিদ্দিকীসহ অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত থাকছেন বাংড়া ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. হাসমত আলী, নাগবাড়ী ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মাকসুদুর রহমান সিদ্দিকী মিল্টন, বীরবাসিন্দা ইউপি চেয়ারম্যান মো. ছোহরাব হোসেন, দুর্গাপুর ইউপি চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. সিরাজুল ইসলাম ও বিআরডিবির সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ আফাজ উদ্দিন প্রমুখ।
২০১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে হজ, তাবলিগ জামাত ও প্রধানমন্ত্রী পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় সম্পর্কে নেতিবাচক মন্তব্য করে মন্ত্রিত্ব হারিয়েছিলেন লতিফ সিদ্দিকী। সেসময় তাঁকে আওয়ামী লীগ ও মন্ত্রীসভা থেকে বহিষ্কারের পর সংসদ থেকে পদত্যাগ করেন। ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন। নির্বাচনী প্রচারণার সময় তাঁর গাড়িতে হামলার ঘটনার প্রতিবাদে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান ধর্মঘট করে নির্বাচন থেকে সরে যান। এরপর থেকে রাজনীতিতে ও কালিহাতীতে নিষ্ক্রিয় ছিলেন তিনি।