মির্জাপুর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে একই পরিবারের তিনজন চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী। ইতোমধ্যে উপজেলার মহেড়া ইউপির বর্তমান চেয়ারম্যান মো. বাদশা মিয়া, তাঁর স্ত্রী রাজিয়া বেগম ও বাদশা মিয়ার ছোটভাই আওলাদ হোসেন চেয়ারম্যান প্রার্থীর মনোনয়নপত্র তুলেছেন। তিনজনই চাইছেন ইউপি নির্বাচনে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন। তিনজনই মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়েও আশাবাদী।
ধানমন্ডির আওয়ামীলীগ দলীয় কার্যালয় থেকে তাঁরা দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করে জমাও দিয়েছেন। নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন মহেড়া ইউপির বর্তমান চেয়ারম্যান বাদশা মিয়া। তিনি ইউনিয়ন আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের কার্যনির্বাহী সদস্য। এছাড়াও গত নির্বাচনে তিনি নৌকার বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন। মনোনয়ন প্রতিদ্বন্দ্বি তাঁর স্ত্রী রাজিয়া বেগম ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ও উপজেলা নারী জাগরণ সংস্থার সভাপতি। অপর প্রতিদ্বন্দ্বি ছোটভাই আওলাদ হোসেন উপজেলা যুবলীগের সদস্য। তবে তার বিরুদ্ধেও রয়েছে গত ইউপি নির্বাচনে নৌকার মনোনিত প্রার্থীর বিরোধিতা করার অভিযোগ।
মির্জাপুর উপজেলা যুবলীগের সদস্য ও বর্তমান চেয়ারম্যানের ছোট ভাই আওলাদ হোসেন জানান, আমি উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। বর্তমানেও দলীয় পদে আছি। আমি ৫ম ধাপে অনুষ্ঠিতব্য ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মহেড়ার নৌকা প্রার্থী হতে ইচ্ছুক। ইতোমধ্যে আমি মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছি। এক পরিবারের তিনজন নৌকার মনোনয়ন চাইছেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমার ভাই মহেড়া ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান। তবে তিনি দলের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত। এ কারণে তিনি দলীয় মনোনয়ন পাচ্ছেননা। এ কারণে আমি দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছি। আমার ভাবীও মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।
তিনি আরও বলেন, দল যদি আমাকে মনোনয়ন না দেয় অন্য কাউকে মনোনয়ন দেয় তবে তার পক্ষেই আমি কাজ করবো। এছাড়া গত ইউপি নির্বাচনে নৌকার বিরুদ্ধে কাজ করার কথা অস্বীকার করেছেন তিনি।
রাজিয়া বেগম জানান, দলের সম্মান রক্ষা করতে আমি নৌকার প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছি। দল আমাকে মনোনয়ন দিলে আমি বিজয়ী হব।
এ বিষয়ে মহেড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বাদশা মিয়া জানান, দলীয় সিদ্ধান্ত গত ইউপি নির্বাচনের বিদ্রোহী প্রার্থীদের দলীয় মনোনয়ন দেয়া হবে না। গত নির্বাচনেও আমি দলীয় প্রার্থীতা চেয়েছিলাম। তবে আমাকে মনোনয়ন না দিয়ে অযোগ্য এক প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়া হয়। আমি আমার যোগ্যতা প্রমান করতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করি ও বিজয়ী হই। এ বছর আমি নির্বাচিত ও জনপ্রিয় চেয়ারম্যান হওয়ার দাবিতে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছি এবং দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার আশাও রাখছি। কিন্তু আমি মনোনয়ন পাচ্ছিনা এমন তথ্যে আমার ছোটভাই প্রার্থী হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সে দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছে। তবে সেও ইউনিয়নে তেমন একটা জনপ্রিয় বা পরিচিতি নয়। তাকে মনোনয়ন দিলে দল এবারও মহেড়া ইউনিয়ন হারাবে এমনটাই ধারণা আমার।
তিনি আরও জানান, আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের একজন সৈনিক, সেই দায়িত্ববোধ থেকে আমি এখন দলের সাথেই আছি। এ দাবিতে আগামী নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী হতে ইচ্ছুক। এরপরও যদি দল আমাকে মনোনয়ন না দেয় সে কারণে আমার স্ত্রী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছে। সে নৌকার প্রার্থী হলে আমি নির্বাচন করবোনা। তবে আমি বা আমার স্ত্রী ব্যতিত অন্য কেউ নৌকার মনোনয়ন পেলে আমি প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করবো।
এদিকে গত নির্বাচনে নৌকা পাওয়া এবারের নৌকা প্রত্যাশী বিভাষ সরকার নুপুর বলেন, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি বিদেশ, সাধারণ সম্পাদক বিদ্রোহী প্রার্থীর ছোট ভাই। কোন বর্ধিত সভা না করেই আমাকে ৩ নম্বর মনোয়ন প্রত্যাশী হিসেবে তালিকা জমা দিয়েছে। কিন্তু আমি ছাড়া যারা নৌকার মনোনয়ন চেয়েছেন তারা গত নির্বাচনে নৌকার বিদ্রোহী প্রার্থী, তার স্ত্রী ও ছোট ভাই। দলীয় নিয়ম অনুসারে বিদ্রোহীরা নৌকার মনোনয় পাবেন না। গতবার আমি নৌকা পেয়েছিলাম, এবারও নৌকার পাওয়ার বিষয়ে আশাবাদী।
উল্লেখ্য, ৫ জানুয়ারি প ম ধাপে মির্জাপুর উপজেলার মহেড়া ইউপিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।