টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীতে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পাইয়ে দেয়ার কথা বলে এক নারী (৩২)কে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় ইউপি সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা ওসমান গণির বিরুদ্ধে। এছাড়া ঘর নিয়ে আর্থিক বাণিজ্যও করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী ওই নারী আদালতে মামলা দায়ের এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
ধনবাড়ী প্রেসক্লাবের সাংবাদিকদের সামনে উপস্থিত হয়ে ভূক্তভোগী ওই নারী তার অভিযোগ উত্থাপন করেছেন।
অভিযুক্ত ইউপি সদস্য ওসমান গণি উপজেলার মুশুদ্দি ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের সদস্য ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং বর্তমান সদস্য। তিনি মুশুদ্দি কামারপাড়া গ্রামের মৃত হোসেন আলীর ছেলে। অভিযোগকারী নারী একই গ্রামের মৃত ছোরহাব আলীর মেয়ে।
ভুক্তভোগী ওই নারী ভাই সুরুজ্জামানসহ দুই বোনকে সাথে নিয়ে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন। এ সময় তিনি টাঙ্গাইল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে দায়ের করা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের সংশ্লিষ্ট ধারায় করা মামলার কপি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) কাছে দায়ের করা লিখিত অভিযোগের কপিসহ এ সংক্রান্ত কাগজপত্র সাংবাদিকদের কাছে হস্তান্তর করেন। মামলা নং- ৩৫০/২১।
ভুক্তভোগী ওই নারীর বক্তব্য ও মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, অসহায় দরিদ্র ওই নারী প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পাওয়ার আশায় ইউপি সদস্য ওসমান গণির কাছে ধন্যা দেন। গত দুই বছর আগে ওসমান গণির পিছনে ঘুরে ৫০ হাজার টাকায় ঘর দেয়ার মৌখিক চুক্তির পর ২৭ হাজার টাকা তাকে প্রদান করেন। কিন্তু দুই বছরে অনেকে ঘর পেলেও ওই নারীর ভাগ্যে জুটেনি কোন ঘর। বাকি ২৩ হাজার টাকা না দেয়ায় গণি তাকে ঘর দিচ্ছেন না এমন ভেবে চাপ দিতে থাকলে ওসমান গণি ওই নারীকে কু-প্রস্তাব দিতে থাকেন। কু-প্রস্তাবে তিনি রাজি না হয়ে টাকা ফেরত নিতে চেষ্টা চালায়। অবশেষে গত ২৭ আগস্ট সকাল ১০ টার দিকে গণি মেম্বার টাকা ফেরত নিতে ওই নারীকে তার বাড়িতে আসতে বলেন। কথা অনুযায়ী টাকাফেরত আনতে তার বাড়িতে গেলে বাড়িতে কেউ না থাকায় ঘরে বসতে দিয়ে তার শরীরের স্পর্শকাতরস্থানে হাত দিয়ে এক পর্যায়ে ধর্ষণের চেষ্টা চালায়। তার ডাকচিৎকারে মেম্বারের স্ত্রী ফাহিমা বাইরে থেকে এসে উল্টো তার উপর চড়াও হন। পরে দুই জনে মিলে তার উপর নির্যাতন চালায় এবং বেধড়ক মারপিট করে। এসময় পড়নের কাপড়-চোপড় খুলে গেলেও তারা থামেননি। পরে স্থানীয়রা এগিয়ে এসে স্বামী-স্ত্রীর নির্যাতন থেকে তাকে রক্ষা করে।
এদিকে মামলার পরের দিন অভিযোগকারী নারী ধনবাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে বিষয়টি তদন্ত স্বাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ প্রদান করেন।
মুশুদ্দি ইউনিয়নের (ভারপ্রাপ্ত) চেয়ারম্যান (৭ নং ওয়ার্ড সদস্য) মোস্তাফিজুর রহমান এমন অভিযোগের কথা শুনেছেন বলে জানান। মুজিবশতবর্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরসহ মুশুদ্দি ইউনিয়নে প্রায় এক শতঘর প্রাপ্তির কথা উল্লেখ করে তিনি আরও জানান, ঘর প্রদানে টাকা লেদদেনের কথা শুনা যাচ্ছে। অভিযুক্ত ইউপি সদস্য ওসমান গণি দুই নারীসহ আরও কয়েক জনের কাছ থেকে ঘর দেয়ার কথা বলে অর্থ নিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ইউপি সদস্য ওসমান গণি তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, একটি মহল আমাকে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করতে মিথ্যা অভিযোগ এবং আদালতে মামলা দিয়ে হয়রানি করছে।
এ ব্যাপারে বক্তব্য জানার জন্য ধনবাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. সামিউল হকের নিকট বারবার মোবাইল করা হলেও তিনি মোবাইল রিসিভ করেননি।