গত সোমবার সকালে উপজেলার ফলদা ইউনিয়নের মমিনপুর এলাকায় ইউপি সদস্য পদে দুই প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। ভাংচুর করা হয়েছে চারটি ঘর-বাড়ি। এতে পরাজিত ইউপি সদস্য প্রার্থী আব্দুল মালেকের কর্মী-সমর্থকের ওপর হামলা চালানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। হামলায় আব্দুল হাই, বেলায়েত, মালেক, বাদশা, হারুন, কাইয়ুম ও বিথী আহত হন। পরে তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায় স্থানীয়রা।
আহত কাইয়ুম জানান, আওয়ামী লীগ নেতা হারুন, বিলাত, আমজাদের নেতৃত্বে একদল লোকজন দেশীয় অস্ত্র-সন্ত্র নিয়ে অতর্কিত হামলা চালিয়ে বাড়ি-ঘর ভাংচুর করে। এতে বাধা দিলে আমাদের উপরেও হামলা চালায়। হামলায় বেশ কয়েকজন আহত হয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
অন্যদিকে নির্বাচনের দিন উপজেলার ফলদা রামসুন্দর ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে জাল ভোট দেয়া, প্রভাব বিস্তার করে প্রকাশ্যে নৌকা প্রতীকে সিল মারার প্রতিবাদে ও কেন্দ্রে ফলাফল ঘোষণার দাবিতে বিক্ষোভ ও কেন্দ্র ঘেরাও করে এলাকাবাসী। বিক্ষোভকারীরা ভূঞাপুর-ফলদা-গোপালপুর সড়কে গাছের গুড়ি ফেলে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। ফলে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে কেন্দ্রে থাকা ম্যাজিস্ট্রেট, প্রিজাইডিং অফিসার ও দায়িত্বরত কর্মকর্তারা। বিক্ষোভকারীদের ছিন্নবিছিন্ন করতে পুলিশ ১৫ রাউন্ড গ্যাসসেল এবং ৫১ রাউন্ড সর্টগানের গুলি ছুঁড়ে। বিক্ষুদ্ধ জনতার ইট পাটকেলের আঘাতে পুলিশ, আনসার সদস্যসহ অর্ধশতাধিক আহত হয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ৪১ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরো ৩ হাজার জনকে আসামি করে মামলা করেছে পুলিশ। ফলে গ্রেফতার আতঙ্কে পুরুষ শূণ্য হয়ে পড়েছে ফলদাসহ আশ পাশের গ্রামগুলো।
উপজেলার গোবিন্দাসী ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের মেম্বার প্রার্থী হাফিজুর হাসান জানান, সোমবার রুবেলের সমর্থক ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে বেশ কিছু লোকজন আমার সমর্থক কয়েড়া গ্রামের লাবলু ও শহিদুলের বাড়ি ভাংচুর করে। পরবর্তীতে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। আমরা আতঙ্কের মধ্যে রয়েছি।
ফলদা শরিফুন্নেছা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সন্তোষ কুমার দত্ত বলেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সহিংসতার ঘটনায় পুলিশ ৪১ জনের নাম উল্লেখ পূর্বক অজ্ঞাত আড়াই থেকে ৩ হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে, ফলে ভয়ে ফলদা গ্রামসহ আশপাশের কয়েক গ্রাম পুরুষ শূণ্য হয়ে পড়েছে। বিকেল ৫টার পর দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। রাস্তা ঘাটে কোন যান চলাচল করে না। সমাজের বিশিষ্টজনরাও আতঙ্কে দিনাতিপাত করছে।
ভূঞাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, নির্বাচনের দিন সহিংসতায় পুলিশ, আনসার সদস্যসহ ৪৯ জন হাসপাতালে এসে চিকিৎসা নিয়েছেন। এদের মধ্যে ৭ জনকে হাসপাতালে ভর্তি এবং উন্নত চিকিৎসার জন্য ২ জনকে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।
এসআই সাইফুল জানান, গাবসারা ইউনিয়নের চর চন্দনী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোটের ফলাফল ঘোষাণা শেষে একপক্ষের মেম্বার প্রার্থীর লোকজন ব্যালট ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করলে অপরপক্ষের লোকজন ও পুলিশের সাথে ত্রিমূখী সংঘর্ষ বাধে। এতে আহত হয় ৬ থেকে ৭ জন। পরে পুলিশ ১ রাউন্ড সাউন্ড গ্রেনেড, ২৪ রাউন্ড সর্টগানের গুলি এবং ৫ রাউন্ড পিস্তলের গুলি ছুঁড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় ৫ জনের নাম উল্লেখসহ ১ হাজার জনকে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা করা হয়েছে।
ভূঞাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মুহাম্মদ আব্দুল ওহাব জানান, ম্যাজিস্ট্রেট, প্রিজাইডিং অফিসার ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের অবরুদ্ধ করে রাখা, সরকারি কাজে বাধা, নাশকতা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির দায়ে মামলা হয়েছে। দোষীদেরকে গ্রেফতার পূর্বক আইনের আওতায় আনার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।#