নিজের বসবাস করা বাড়ি বা জায়গায় সরকারি পাকা ঘর পাবেন এমন লোভনীয় প্রস্তাবে স্থানীয় চিহ্নিত একটি চক্রের চক্করে পড়ে বিপদে পড়েছেন টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার কুড়াগাছা ইউনিয়নের পিরোজপুর (পশ্চিম) গ্রামের প্রায় দেড় শত মানুষ। বাড়ি বাড়ি পৃথক ঘর না হয়ে সরকারি প্রকল্পের শর্তে একই স্থানে ‘গুচ্ছ গ্রাম আশ্রয়ণ প্রকল্প’ বাস্তবায়ন হওয়ার শুরুতে ঘর প্রত্যাশিদের স্বপ্ন ভঙ্গ হওয়ায় এমন বিপদের শঙ্কা করছেন। বিপদ শঙ্কায় তারা এখন ঘর পাওয়ার আবেদন থেকে সরেই দাঁড়াননি প্রকল্পের স্থান পরিবর্তন করার আবেদনসহ মানববন্ধন কর্মসূচিও পালন করছেন।
রবিবার বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে পিরোজপুর বাজারের তিন রাস্তার মোড়ে স্থানীয়রা মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে এমন দাবি তুলেছেন।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, এলাকার স্থানীয় সাবেক জন প্রতিনিধি ও দালাল চক্র সরকারি পাকা ঘর দেবার নাম করে অর্ধ শতাধিক জনের কাছ থেকে মাথা পিছু ২ থেকে ১০ হাজার টাকা নিয়ে তালিকা করেছেন। আবেদনকারীদের পক্ষে কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন দিয়ে পরে তদ্বির শুরু করেন। এদিকে সরকারিভাবে চাহিদার ভিত্তিতে এলাকায় প্রকল্প বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া শুরু হয়। অনেকের ভোগ দখলে থাকা আবাদি খাস জমি নির্ধারিত হয় ‘গুচ্ছ গ্রাম আশ্রয়ন প্রকল্প’ বাস্তবায়নের। দখলী জমি হাত ছাড়া ও এক জায়গায় অনেকগুলো পরিবারের বসবাসের গুচ্ছ গ্রাম আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু হওয়ার সাথে সাথে সবার স্বপ্ন ভঙ্গ হয়। তাই ঘর প্রাপ্তির প্রত্যাশা থেকে সরে গিয়ে উল্টো প্রকল্প স্থানান্তরের দাবি করেছেন কর্তৃপক্ষের কাছে।
গত ২০ জুন এলাকাবাসীর পক্ষে ড. শাহ মো. রফিকুল ইসলাম নামের জনৈক স্থানীয় বাসিন্দা টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসকের বরাবরে গণস্বাক্ষর করা আবেদন দিয়েছেন। এর আগে ১৪ জুন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবরে গণস্বাক্ষর করা অনুরূপ আবেদন দেয়া হয়।
এলাকায় অভিযোগ পাওয়া গেছে, রওশানারা বেগম নামের এক নারী ঘর পাওয়ার আবেদন করে স্থানীয় সাবেক(গত ১৫ জুন নির্বাচন হয়ে যাওয়ায়) জনপ্রতিনিধিকে টাকা ও এনআইডি দিয়ে ছিলেন। তার দুটি ব্যাটারি চালিত অটোরিক্সা, একাধিক থাকার ঘর, চাষের জমি থাকার পরও বাড়িতে একটি বাড়তি ঘর পাবেন বলে এমনটি করেছেন। এখন তিনি সেখান থেকে সরে এসেছেন। মানববন্ধনে অংশ নিয়ে রওশানারা জানান, লোভ দেখিয়ে তার কাছ থেকে টাকা ও ভোটার কার্ড নেয়া হয়েছে।
মোতালেব, তারা মিয়া, আবছার আলীসহ মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা জানান, তারাও ঘর প্রত্যাশায় আবেদন করেছেন। তারা এখন ঘর চান না।খাস জমি হলেও পূর্ব পুরুষ থেকে তারা বাবা মা নিয়ে ছোট ঘরে থাকছেন। আশ্রয়ণ কেন্দ্রে এমনভাবে থাকা যাবে না। গুচ্ছ গ্রামের আশ্রয়ণে তারা থাকবেন না। তাই আন্দোলন করছেন এলাকা থেকে আশ্রয়ণ প্রকল্প অন্য কোথাও সরিয়ে নিতে।
ডিসি অফিসে দেয়া আবেদনে বলা হয়েছে, প্রকল্পে যারা গৃহ পেতে যাচ্ছেন তাদের কেউ গৃহহীন নন। তাদের প্রত্যেকের নিজস্ব জমি জমা ও বাড়ি ঘর আছে। কারো কারো আধা পাকা বাড়ি আছে। আবেদনে দাবি করা হয়েছে- ওই গ্রামে গৃহহীন কোন মানুষ নেই। ঘনবসতিপূর্ণ ওই গ্রাম ফলমূল, গাছপালা ও বাগানের সবুজে ঘেরা। গুচ্ছ গ্রাম হলে আবাদি জমি, ঘরবাড়ি, ফলের বাগান গাছপালা কাটা পড়ে প্রাকৃতিক পরিবেশ মারাত্নক হুমকিতে পড়ার সম্ভাবনা।
মধুপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আমিনুর রশীদ জানান, পিরোজপুরে ৩৫ টি পরিবারের জন্য সরকারি জমিতে আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, আবেদনের ভিত্তিতে ৩০টি পরিবারের জন্য আশ্রয়ন প্রকল্পে ঘরের কাজ শুরু হয়েছে। আন্দোলন করে রাষ্ট্রের উন্নয়ন কাজ বন্ধ করার সুযোগ নাই। যারা না নিতে চায় তাদের বাদ দিয়ে বাকী গৃহহীনদের বরাদ্দ দেওয়া হবে।