টাঙ্গাইল-জামালপুর মহা-সড়কেই অবস্থিত ধনবাড়ী বাস ষ্ট্যান্ড। এ উপজেলাসহ পাশ্ববর্তী কয়েক উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলের লোকজন এ বাস ষ্ট্যান্ড থেকেই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বাসে চলাফেরা করে। বাস চলাচলের সুবিধার্থে রাস্তাটি সম্প্রতি করা হয় চার ল্যান্ডে। যা দুই ল্যান্ডেই দখলে অটোরিকশা-সিএনজি,ভ্যান ও যাত্রীবাহী বাসের। আধুনিক এ উপজেলার গুরুত্বপূর্ণস্থানগুলোতে কোন ট্রাফিক পুলিশ ব্যবস্থা না থাকায় পোহাতে হচ্ছে নিধারুণ ভোগান্তি, ঘটছে দুর্ঘটনা।
জনসাধারণ বলছে, ‘এ ভোগান্তি ও দুর্ঘটনা এড়াতে শিগগিরই ট্রাফিক পুলিশ ব্যবস্থা ও বাস ষ্ট্যান্ড এলাকায় ওভার ব্রীজ নিমার্ণ করার। এদিকে ধনবাড়ী চৌঁরাস্তা থেকে বাস ষ্ট্যান্ডের দুই মিনিটের রাস্তা। রাস্তার দুপাশে অটোরিকশা, সিএনজি ও ভ্যান রাখায় অর্ধ ঘন্টাতেও পৌঁছানো যাচ্ছে না বাস ষ্টান্ড এলাকায়। এতে শিক্ষার্থী, কর্মজীবী ও জরুরী সেবার গাড়ীগুলো প্রতিনিয়ই ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। তাঁরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন পৌর কতৃপক্ষ ও উপজেলা প্রশাসনের উদাসিনতায় এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে। তবে পৌর কতৃপক্ষ ও উপজেলা প্রশাসন বলছে বিষয়টি শিগগিরই সমাধান করা হবে।’
সরেজমিনের গিয়ে দেখা যায়, ধনবাড়ী বাস ষ্ট্যান্ডটি চার ল্যান্ডের রাস্তা। রাস্তার দু’পাশে অবাধে অটোরিকশা-সিএনজি, ভ্যান ও বাস রেখে দুই ল্যান্ড দখল করে রেখেছে। পায়ে হেঁটেও রাস্তা পারাপার হওয়া দায়। শিক্ষার্থী ও কর্মীজীবীরা রাস্তা পার হওয়ার জন্য দাঁড়িয়ে রয়েছে। ধনবাড়ীর চৌঁরাস্তা থেকে বাস ষ্ট্যান্ডের রাস্তায় মোড়ে মোড়ে রাস্তার দুপাশে অটোরিকশা-সিএনজি ও ভ্যান রাখার কারণে প্রতিনিয়তই দীর্ঘ সময়ের যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। রাস্তার ফুটপাতগুলো দুপাশের ব্যবসায়ীরা দখল করে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। ফুটপাত দিয়ে কোনভাবেই হাঁটা-চলা সম্ভব নয়। ফুটপাত দিয়ে চলাচলেও জনসাধাণের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
ফুটপাতেই কথা হয় এক চলাচলকারীর সাথে। তিনি বলেন ধনবাড়ী চৌরাস্তা থেকে বাস ষ্ট্যান্ডের দুই মিনিটের রাস্তা যেতে সময় লাগে প্রায় অর্ধ ঘন্টা। ধনবাড়ী চৌরাস্তার সম্মূখে সিহাব ও আশরাফ ট্রেডার্স নামের দুই সবজীর আড়ত। এখানে প্রতিদিন সকালে উপজেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত শাক-সবজী আড়তে বিক্রি করতে নিয়ে আসে অটোরিকশা-সিএনজি ও ভ্যানে করে। অটোরিকশা-সিএনজি ও ভ্যানগুলো রাস্তার দুপাশে রেখে তারা বেচা-বিক্রি করে। এ সময় যদি বিপরিত দিক থেকে কোন বাস-ট্রাক আসে তখনই সৃষ্টি হয় যানজটের।
চৌরাস্তা রোডে যাতায়াতকারী আসিয়া হাসান আলী মহিলা ডিগ্রী কলেজের শিক্ষার্থী বর্ণা আক্তার, ইসরাত জাহান মিতু ও আসিয়া আক্তার জানান, বাস ষ্ট্যান্ড পাড়ি দিয়ে যেতে হয় আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হয়ে যেতে হয় আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। এছাড়াও রাস্তার ওপাড়ে রয়েছে নওয়াব ইনটিস্টিটিউশন, সাকিনা মেমোরিয়াল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, নওয়ার প্রাথমিক বিদ্যালয়, মুকুল ক্যাডেটসহ আরও বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এ রোডের দুপাশে অটোরিকশা-সিএনজি ও ভ্যান রাখাসহ সবজির আড়তের কারণে সকাল থেকেই বেলা এগারোটা পর্যন্ত তীব্র যানজট থাকে। মাঝে মাঝে পায়ে হেঁটেও যাওয়া কষ্টসাধ্য হয়ে পরে। ফুটপাতগুলো ব্যবসায়ীদের দখলের জন্য ফুটপাত ব্যবহার করা যাচ্ছে না। আমরা সময় মত স্কুল-কলেজে যেতে পারি না। এই যানজট নিরসনে এ দুই আড়ত সরিয়ে অন্য কোথায় নিয়ে গেলে কিছুটা যানজট কমবে। এ ব্যাপারে কতর্ৃপক্ষের দৃষ্টি কামনা করি।
ধনবাড়ী সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী মাহফুজুর রহমান ও তানিয়া আক্তার জানান, বাস ষ্ট্যান্ডে তীব্র যানযটের কারণে সময় মত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে পানি না। এ উপজেলাটি আধুনিক উপজেলা হলেও নেই কোন ট্রাফিক পুলিশ ব্যবস্থা। যানজট নিরসনে ট্রাফিক পুলিশ ব্যবস্থাসহ ওভার ব্রীজ নিমার্ণ করলে চলাচলে সুবিধা হবে।
পথচারী আব্দুল করিম, সোলাইমান কবির, আহসান হাবিব জানান, বাস ষ্ট্যান্ড এলাকায় বড়বড় গাড়ীগুলো যেভাবে তেড়ে আসে রাস্তা পার হতে অনেক ভয় লাগে। এ এলাকায় আইনি কোন নিয়ম-কানুন না থাকায় ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। পুরো বাস ষ্ট্যান্ডটি আটোরিকশা, সিএনজি, ভ্যান ও যাত্রীবাহী বাসের দখলে। এ ব্যাপারে কেউ কোন সময় কিছুই বলে না। কতৃপক্ষের নিকট আমাদের দাবি বাস ষ্ট্যান্ড এলাকাটি চলাচলে উপযোগি করে হোক।
এ ব্যাপারে আসিয়া হাসান আলী মহিলা ডিগ্রী কলেজের ইংরেজী বিভাগের শিক্ষক তাপস চন্দ্র দাস বলেন, এ যানজটের কারণে নির্দিষ্ট সময়ে কলেজে যেতে পারি না। এ ছোট রাস্তায় বড় ধরনের যানযট সব সময় লেগেই থাকে।
ধনবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. চান মিয়া জানান, চৌঁরাস্তার রোডে অটোরিকশা সিএনজি ও ভ্যান চালকেরা গাড়ী রাখার জন্য এমন পরিস্থির সৃষ্টি হচ্ছে। যানযট নিরসনে বিষয়টি দেখা হচ্ছে।
ধনবাড়ী পৌর সভার মেয়র মুহাম্মদ মনিরুজ্জামান বকল বলেন, ‘শিগগিরই যানজট নিরসনে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। জনসাধারণ যেন ভোগান্তির শিকার না হয় এবং রাস্তায় গাড়ী না রাখার জন্য বলা হচ্ছে। ফুটপাতগুলো চলাচলের উপযোগি করে হবে।’