টাঙ্গাইলের সখিপুর উপজেলার বেতুয়া গ্রামের হত দরিদ্র আবদুল মজিদের বয়স এখন ৭০ বছর পার হয়েছে । এ বয়সেও দিনমজুরের কাজ করেই তার সংসার চলে । একটি ছাপড়া ঘর আছে তাও জরাজীর্ণ। বৃষ্টি এলেই চাল চুয়ে ঘরের মেঝেতে পানি পড়ে। রাতে ঠিকমত ঘুমাতে পারেন না। যেখানে আবদুল মজিদের নুন আনতে পান্তা ফুরোয়, সেখানে তার জরাজীর্ণ ঘরটি মেরামত করার কোনো উপায়ও নেই। ওই গ্রামের বাসিন্দা কামরুল হাসান। উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি। মজিদের দুরাবস্থার বিষয়টি সখিপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে অবগত করান। পরে চেয়ারম্যানের ব্যক্তি উদ্যোগে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরের আদলে আবদুল মজিদের ওই বাড়িতে শৌচাগারসহ পাকা রঙিন টিনের ঘর তৈরি করে দেন।
বৃহস্পতিবার (১২ আগস্ট) দুপুরে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উপজেলার বেতুয়া গ্রামে গিয়ে আবদুল মজিদকে ওই ঘরের চাবি বুঝিয়ে দেন।
আবদুল মজিদ উপজেলার বেতুয়া পশ্চিমপাড়া গ্রামের মৃত বাহর আলীর ছেলে। তার বাবাও আমৃত্যু মানুষের বাড়িতে কাজ করেছেন।
ওই গ্রামের বাসিন্দা সখিপুর আবাসিক মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ রেনুবর রহমান জানান, আমার বয়স ৬০ পেরিয়েছে কয়েক বছর আগেই। ছোটকাল থেকেই মজিদকে দিন মজুরের কাজ করতে দেখছি। তাঁর এ দুনিয়ায় এক শতাংশ জমিও নেই। অন্যের জমিতে বসবাস করছেন। একটি জরাজীর্ণ ঘরে বসবাস করা দেখে গ্রামবাসী আবদুল মজিদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহারের একটি বাড়ি দাবি করেন। পরে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জুলফিকার হায়দার কামাল লেবু তার পকেটের টাকা দিয়ে মজিদকে ওই আদলে একটি পাকা চৌচালা টিনের ঘর করে দেন। আবদুল মজিদকে ঘর করে দেওয়ার জন্য গ্রামবাসীর পক্ষ থেকে উপজেলা চেয়ারম্যানকে ধন্যবাদ জানাই।
তিনি আরও জানান, আবদুল মজিদ প্রায় ৫০ বছর আগে একটি বিয়ে করেন। ওই ঘরে তিন মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে। তিন মেয়ের বিয়ে হয়েছে ও এক ছেলে বিয়ে করে শ্বশুর বাড়ি চলে গেছে। প্রথম স্ত্রীও তাকে ছেড়ে চলে যাওয়ায় বছর পঁচিশের আগে মজিদ দ্বিতীয় বিয়ে করেন। শেষ স্ত্রীর কোনো সন্তান হয়নি। দ্বিতীয় বিয়ে করার কারণে তার একমাত্র ছেলে নবীন হোসেন বাবাকে ছেড়ে চলে যায়। নবীন বাসাইল উপজেলার কাশিল গ্রামে বসবাস করছেন। বর্তমানে সে বিদেশে আছেন। একমাত্র ছেলে বাবার খোঁজ না নেওয়ায় আবদুল মজিদ কষ্টেই দিন যাপন করছেন।
আবদুল মজিদ বলেন, আমি মরার আগে বিল্ডিং ঘরে শুইয়া যাইতে পারমু, জীবনেও ভাবি নাই। উপজেলা চেয়ারম্যান ছারের (স্যারকে) আল্লায় যেন ভালা করে ।
বৃহস্পতিবার আবদুল মজিদের ঘর বুঝিয়ে দেওয়ার সময় উপস্থিত ছিলেন, সখিপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জুলফিকার হায়দার কামাল লেবু, ইউএনও চিত্রা শিকারী, বহেড়াতৈল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম ফেরদৌস, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা এরশাদুল আলম, সখীপুর আবাসিক মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ রেনুবর রহমান, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি কামরুল হাসান, স্থানীয় সংরক্ষিত মহিলা ইউপি সদস্য রেনু বেগম প্রমূখ।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জুলফিকার হায়দার কামাল লেবু বলেন, প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সারাদেশে হাজার হাজার গৃহহীনদের পাকা ঘর উপহার দিয়েছেন। আমি আমার ব্যক্তিগত তহবিল থেকে এক লাখ ৭৫ হাজার টাকা ব্যয়ে সরকারের ওই ঘরের আদলে একটি ঘর করে দিয়েছি মাত্র। আমার তেমন সামর্থ নেই। আমার ইচ্ছা আছে ভবিষ্যতে আরও গরিব ও দুঃস্থ মানুষের সহযোগিতা করার ।