কালিহাতীতে সাবেক রাষ্ট্রপতি, প্রধান বিচারপতি মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক আবু সাঈদ চৌধুরীর ৩৩ তম মৃত্যু বার্ষিকী পালন করা হয়েছে।
গতকাল সোমবার সকালে উপজেলার নাগবাড়ী হাসিনা চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়ে মরহুম রাষ্ট্রপতি আবু সাঈদ চৌধুরী ও তাঁর পরিবাবরে মরহুম সদস্য বর্গের রুহের মাগফেরাত কামনা করে দোয়া ও মোনাজাতের মাধ্যমে মৃত্যু বার্ষিকী পালন করা হয়।
সিনিয়র শিক্ষক মো. আব্দুল্লাহ দোয়া ও মোনাজাতটি পরিচালনা করেন। এসময় প্রধান শিক্ষক মো. আবুল হাশেম, সহকারি প্রধান শিক্ষক খালেদা আক্তার, সিনিয়র শিক্ষক এস এম আশরাফ হোসেন, সহকারি শিক্ষক মনোয়ারা আক্তার, মো.আজহারুল হক, অনন্ত সূত্রধর, মো. আনোয়ার হোসেন, নিবিড় গোপ ও গ্রন্থাগারিক রুমা খাতুন মোনাজাতে অংশ নেন।
কালিহাতীর এ কৃতি সন্তান ১৯৮৭ সালের ২ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রে জাতি সংঘ মানবাধিকার কমিশনের একটি সভায় সভাপতির দায়িত্ব পালন কালিন সময়ে পরলোকগমন করেন। আবু সাঈদ চৌধুরী ১৯২১ সালের ৩১ জানুয়ারি উপজেলার নাগবাড়ী গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম জমিদার পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন। তাঁর পিতা আবদুল হামিদ চৌধুরী পূর্বপাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের স্পিকার ছিলেন।
আবু সাঈদ চৌধুরী কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে স্নাতক (১৯৪০) এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ও আইন বিষয়ে ডিগ্রি লাভের পর ইংল্যান্ডের লিংকন্স ইন থেকে বার এ্যাট ল্যা ডিগ্রী লাভ করেন। ১৯৪৭ সালে তিনি কলকাতা হাইকোর্টে আইনজীবি পেশায় যোগদান করেন। ভারত বিভাগের পর ঢাকায় এসে ১৯৪৮ সালে ঢাকা হাইকোর্টে আইনজীবি পেশায় যোগ দেন। ১৯৬০ সালে আবু সাঈদ চৌধুরী পূর্ব-পাকিস্তানের এ্যাডভোকেট জেনারেল এবং ১৯৬১ সালে হাইকোর্টের বিচারপতি নিযুক্ত হন। তিনি পাকিস্তানের সাংবিধানিক কমিশনের সদস্য (১৯৬০-৬১) এবং বাংলা উন্নয়ন বোর্ডের (১৯৬৩-৬৮) চেয়ারম্যান ছিলেন। বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী ১৯৬৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিযুক্ত হন। ১৯৭১ সালে জেনেভায় অবস্থানকালে পূর্ব পাকিস্তানে পাকবাহিনীর গণহত্যার প্রতিবাদে তিনি উপাচার্য পদ থেকে ইস্তফা দেন। মুজিবনগর অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকারের বিশেষ দূত হিসেবে জেনেভা থেকে তিনি লন্ডনে যান এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায়ে সচেষ্ট হোন।
স্বাধীনতার পর বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী ঢাকায় প্রত্যাবর্তন করে ১৯৭২ সালের ১২ জানুয়ারি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। তিনি ১৯৭৩ সালের ১০ এপ্রিল পুনঃরায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হোন। একই বছরের ডিসেম্বরে তিনি রাষ্ট্রপতির পদ থেকে ইস্তফা দেন এবং একজন মন্ত্রীর পদমর্যাদায় বৈদেশিক সম্পর্ক বিষয়ক বিশেষ দূত নিযুক্ত হোন।
১৯৭৫ সালের ৮ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মন্ত্রিসভায় তিনি বন্দর ও নৌপরিবহন মন্ত্রী ছিলেন। বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী ১৯৭৮ সালে জাতিসংঘে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতি বৈষম্যের অবসান এবং তাদের নিরাপত্তা বিষয়ক উপকমিটির সদস্য নির্বাচিত হোন। ১৯৮৫ সালে তিনি জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের সভাপতি নির্বাচিত হন। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে “দেশিকোত্তম” উপাধিতে ভূষিত করে এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সম্মানসূচক ডক্টর অব “ল” ডিগ্রি প্রদান করে। তাঁর রচিত প্রবাসে মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলি (১৯৯০) বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কিত একটি মূল্যবান গ্রন্থ।
এস/এস/এস