১৯৭১ সালের পহেলা জুলাই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কর্তৃক কালিয়ান গ্রামে ঘটে নারকীয় ঘটনা।কাদেরিয়া বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে খবর ছিল বংশাই নদী হয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এগিয়ে আসছে।বীর মুক্তিযোদ্ধারা হানাদার বাহিনীকে নাস্তানাবুদ করার জন্য গ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলে বাংকার খুড়ে শক্ত অবস্থান নেয়।
অন্যদিকে বহেড়াতলীতে বেশ কিছু মুক্তিকামী সেনা অস্ত্র হাতে অবস্থান নিয়ে বসে থাকে।উদ্দেশ্য ছিল হানাদার বাহিনী নকিল বিলের মাঝখানে আসলে গুলি করে নৌকা ডুবিয়ে দিয়ে নরপিশাচদের ভবলীলা সাঙ্গ করে দেয়া।সেই মোতাবেকই হানাদাররা এগিয়ে আসছিল।কিন্তু ভাগ্য সেদিন হানাদারদের পক্ষে ছিল।
কাউলজানী হাটখোলা নামক জায়গায় আসার পরেই ভুলক্রমে কালিয়ানে অবস্থান নেয়া মুক্তিযুদ্ধাদের রাইফেল থেকে মিছ ফায়ারিং হয়।আর এতেই হানাদার বাহিনী সতর্ক হয়ে যায়।তার পরেই শুরু হয় কালিয়ান গ্রামের উপর নরপিশাচদের তান্ডবলীলা। মেশিনগান থেকে এলোপাথাড়ি ভাবে কালিয়ান গ্রামের উপর গুলিবর্ষণ করে এবং অনবরত মর্টার শেল নিক্ষেপ করতে থাকে।
এ সময় মুক্তিযুদ্ধারা হানাদারদের আক্রমনের তীব্রতা লক্ষ করে পিছু হটতে থাকে।অন্যদিকে মুক্তিযুদ্ধাদের ভয়ে হানাদাররা পাহাড়ে প্রবেশ না করে নদীর পাড় ঘেষা বসত বাড়িতে তান্ডবলীলায় মেতে ওঠে।অন্তত চল্লিশটি বাড়িতে তারা আগুন ধরিয়ে দেয়।হানাদাররা যাওয়ার পথে যাকেই পেয়েছে তাকেই বেয়নেট দিয়ে খুচিয়ে খুচিয়ে নির্মমভাবে আঠার জন নিরীহ গ্রামবাসীকে হত্যা করেছে।
শুধু হত্যাই নয় সেদিন আরো পাঁচজন নিরীহ গ্রামবাসীকে ধরে নিয়ে যায় এবং তাদের উপর চালানো হয় অত্যাচারের স্টিমরোলার।ধরে নিয়ে যাওয়া ব্যাক্তিদের মধ্যে যারা বেঁচে আছেন সেদিনের সেই বিভীষিকাময় পরিস্থিতির কথা মনে করে এখনো ভয়ে আতকে উঠেন।প্রত্যেক বছর যথাযথ মর্যাদার সাথে গ্রামবাসী এই দিনটিকে স্মরণ করে থাকে।এ ছাড়াও সামাজিক সেবা মূলক সংগঠন “মানিক স্মৃতি সংসদ” এর পক্ষ থেকে দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে দোয়া মাহফিল ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
আজকের এই দিনে আঠারো জন শহীদ সহ মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে সকল শহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই।
লেখকঃ আসলাম সিকদার নোবেল।